৯ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, রাত ২:৫১

মানহীন ও ভেজাল পণ্যে ভরা নগরী

প্রাইমনারায়ণগঞ্জ.কম

প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:

ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের নানা পণ্যে ছেয়ে গেছে নগরীর পাইকারী-খুচরা বাজার থেকে পাড়া-মহল্লা, অলি-গলির হাট-বাজার ও দোকানপাট। ভোগ্য পণ্য থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য পণ্য, বৈদ্যুতিক পণ্য, ওষুধ, সার্জিক্যাল সরঞ্জাম, শিশুর গুড়ো দুধ থেকে বৃদ্ধের ইনসুলিন, রূপচর্চার কসমেটিক থেকে শক্তি বর্ধক ভিটামিন, এমন কি বেঁচে থাকার জন্য যা অপরিহার্য সেই পানিতেও এখন ভেজাল করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানেও থামছে না ভেজালের কারবারম, ফলে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। মানহীন ও ভেজালে ভরা এসব পণ্য দিয়ে জনসাধারণকে ঠকাচ্ছে বিবেকহীন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জেলা প্রশাসন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

জানা যায়, বছরের প্রায় সবসময়ই একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র সক্রিয় থাকে মানহীন ও ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে। লঘু সাজার কারণে নকল, মানহীন-ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই থামানো সম্ভব হচ্ছে না। অথচ নগরীতে সবরকমের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে ও মান যাচাই-বাছাই করতে সরকারের একাধিক সংস্থার কাজ করার কথা, প্রতারণা এড়াতে তৎপর থাকার কথা তাদের। কিন্তু বাস্তবতা হলো- নাসিক ও প্রশাসনের কঠোর তৎপরতার অভাবে মানহীন, নকল ও ভেজাল পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকারী সিন্ডিকেটকে থামানো যাচ্ছে না। বছরজুড়েই ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির রমরমা বাণিজ্য চলছে।

নানা সমস্যার গ্যাঁড়াকলে নিমজ্জিত নগরীর অন্যতম সমস্যা হলো মানহীন, নকল ও ভেজাল পণ্য। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, পচন রোধে ব্যবহৃত ফরমালিন এখন মেশানো হচ্ছে মাছ, দুধ, মিষ্টি ও ফলে। বাহারি কৃত্রিম রং মেশানো হচ্ছে সবজি, ফল ও মিষ্টিতে। গুঁড়া মসলায় মেশানো হচ্ছে ইটের গুঁড়া ও কৃত্রিম রং। খাদ্য ও পানীয়তেও মেশানো হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রং। পেঁপে, কলা, টমেটো প্রভৃতি ফল ও সবজি কৃত্রিমভাবে পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথ্রেল ইত্যাদি। শুঁটকি মাছে মেশানো হচ্ছে কীটনাশক ডিডিটি।

খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোগ্যপণ্যে ভেজাল থাকলে সে খাদ্য ও ফলমূল থেকে কিডনি, পাকস্থলী ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও রয়েছে। ভেজাল ও মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক অভিযান চালানোর দাবিও জানান তারা।

জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও দেখা দিয়েছে ভেজাল আতঙ্ক। ভেজালহীন কিছু খুঁজে পাওয়া বর্তমান বাস্তবতায় দুষ্কর। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িতেই তৈরি করছেন চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত সুরক্ষাসামগ্রী আর নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ফ্লোর ক্লিনার, টাইলস পুডিং, ভিক্সলসহ বিভিন্ন পণ্য। বাজারে এসব নকল পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে অভিজাত ব্র্যান্ডের মোড়কে বাজারজাত করা মানহীন নকল সুরক্ষা ও চিকিৎসা সামগ্রীর বিক্রি বন্ধ করার লক্ষ্যে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝেই অভিযানে নামে প্রশাসন। কিন্তু অভিযান শেষে আবারও শুরু হয় মানহীন ও ভেজাল চিকিৎসা পণ্য।

এদিকে, বাজারে প্রচলিত বৈদ্যুতিক পণ্যের ব্র্যান্ডগুলো নকল করে বাজারজাত করছে কয়েকটি চক্র। চীন থেকে কম দামে বৈদ্যুতিক পণ্যের খুচরা সরঞ্জাম আমদানি করে সংযোজন করে এ চক্রগুলো। এরপর নানা ব্র্যান্ডের নামে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। মানহীন এসব বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এসব পণ্যের প্যাকেট এতটাই নিখুঁত যে বোঝার উপায় নেই এটি আসল না নকল। তাই ক্রেতারা প্রতিনিয়তই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে, এসব মানহীন বৈদ্যুতিক পণ্যের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে জানায় প্রকৃত ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রায় ৭০ শতাংশ হয় বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। বাজারে মানহীন কেব্ল, সুইচ, হোল্ডারসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে এসব দুর্ঘটনা বেশি ঘটে বলেও মনে করেন তারা।

সর্বোপরী বলা যায়, ভেজাল ও মানহীন পণ্যের বৃহৎ রাজ্যে অসহায় সাধারণ মানুষ। অনেকটা জেনে-শুনে-বুঝে সবাই হাতে নিচ্ছে ভেজাল মিশ্রিত যে কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, ক্রয় করছে নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক পণ্য। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ভেজাল ও মানহীন এসব পণ্যের ব্যবহার থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারছে না কেউ। এক কথায় ভেজালে ভেজালে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী।

উপযুক্ত নজরদারি, কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতার অভাবে ভেজালের মাত্রা ও পরিমাণ এবং মানহীন পণ্য বেড়েই চলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

বাছাইকৃত সংবাদ

No posts found.